তীব্র তাপদাহে ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে

তীব্র তাপদাহে ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে
অন্তিক চক্রবর্তী :

‘গত শুক্রবার আমার মেয়ে সুরাইয়ার জ্বর হয়, রাত থেকে শুরু হয় পাতলা পায়খানা। পরদিন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাই। চিকিৎসকরা আমাকে জানিয়েছেন, ডায়রিয়ার কারণে  সুরাইয়ার শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়াম কমে গেছে। আমার মেয়ের শরীরটা খুব দুর্বল হয়ে গেছে। তাকে হাসপাতালে আরও দুদিন রাখা লাগবে’ — এমনটাই বলছিলেন ৮ বছরের শিশু সুরাইয়ার মা আয়েশা বেগম। 
অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন তিনি।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলমান তাপপ্রবাহের কারণে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে, ফলে ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে। গরমের মৌসুমে স্বাভাবিকভাবেই দেশে জ্বর, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। 

প্রকৃতি পুড়ছে গ্রীষ্মের তাপদাহে। মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে হাঁপিয়ে উঠেছে জনজীবন। অসহনীয় গরম আর তাপদাহে বিমর্ষ প্রাণ ও প্রকৃতি। 
গত মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সরেজমিনে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল সহ বেশ কটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায় রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। এদের বেশিরভাগ রোগীরা জ্বর, সর্দি কাশি, হিটস্ট্রোক, পেটের সমস্যা, টাইফয়েড ও পানিবাহিত হেপাটাইটিসে ভুগছেন। তীব্র গরম, আবহাওয়ার পরিবর্তন, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানি খাওয়ার কারণেই রোগ বাড়ছে। হাসপাতালের জরুরী বিভাগে রোগীর চাপ সবচেয়ে বেশী দেখা যায়। মূলত শিশু এবং মেডিসিন ওয়ার্ডে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন, কেউ কেউ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে শয্যা পেতেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষের। 
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আরএমও ডাঃ মোঃ আশিকুর রহমান বলেন, প্রচন্ড গরমে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ডায়রিয়া জ্বর-সর্দি, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। পর্যাপ্ত পরিমান বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং খাদ্যের বিষক্রিয়া জনিত কারণে মানুষ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া কর্মজীবি মানুষেরা প্রচন্ড গরমে শরীর পানিশূন্য হয়ে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই সমস্ত রোগীরা তীব্র তাপদাহ চলাকালীন সময়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। 
সদর হাসপাতালে কথা হয় শহরের বাহাড়ছড়া নিবাসী ষাটোর্ধ  আবু জাফরের সঙ্গে। তিনি দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, দুপুরবেলা বাসার ছাদ পরিষ্কার করছিলাম। গরমে হঠাৎ সেন্সলেস হয়ে যাই, ছাদ থেকে আমাকে বাসায় নিয়ে মাথায় পানি দেওয়া হয় এতে জ্ঞান ফিরলেও শারীর দুর্বল হয়ে যায় ও বারবার পায়ের পেশিতে টান পড়ছিল। ফলে হাসপাতালে ভর্তি হই। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন আমার হিটস্ট্রোক হয়েছিল। 
তীব্র তাপদাহে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়ানোর পরামর্শ দিয়ে ডাঃ প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী অর্নব বলেন, তীব্র তাপদাহে সাবধানতা অবলম্বন না করলে, হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি। মনে রাখতে হবে, এই অতিরিক্ত গরমের সময় পানিবাহিত রোগ যেমন- জন্ডিস, টাইফয়েড জাতীয় রোগগুলোর প্রাদুরভাব বেড়ে যায়।  তাই এই সময় খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে খুব সচেতন হতে হবে।  বাইরের দোকানের খোলা খাবার যতোটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।  যেখানে সেখানের খাবার পানি পান করা যাবেনা।  অবশ্যই খাবারের পানি বিশুদ্ধ হতে হবে। 
তিনি আরো বলেন, হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে রৌদে ছাতা ব্যবহার করতে হবে।   প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে,যেনো কোনো ভাবেই শরীর ডিহাইড্রেইড না হয়। অতিরিক্ত গরমে শরীর থেকে পানির সাথে সাথে লবণ  বেরিয়ে যায়। যার ফলে শরীরে ইলেকট্রলাইটসের ঘাটতি হওয়ার  সম্ভবনা থাকে।  তাই শরীর বেশি দুর্বল লাগলে স্যালাইন পানি, ডাবের পানি ও খাওয়া যেতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস রোগীদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এসব রোগীর হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। যাদের ব্লাডপ্রেশার আছে তীব্র গরমে তাদের মানসিক চাপ বেড়ে যায়। এই সময়ে খাবার গ্রহণে সতর্ক থাকতে হবে। খেতে হবে এমন সব খাবার, যা সহজে হজম হয় ও যাতে পানির পরিমাণ বেশি রয়েছে। রাস্তায় গরম থেকে বাঁচতে শরবত আইসক্রিম এগুলো খাওয়া যাবে না। অনিরাপদ পানি পান থেকেও বিরত থাকতে হবে।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.